সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২০ অপরাহ্ন

খাল উচ্ছেদ হয় দখলমুক্ত হয় না, চার বছরেও উদ্ধার হয়নি ২৬ খাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, একুশের কন্ঠ : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ২০২১ সালের শুরুতে মোহাম্মদপুর বসিলায় লাউতলা খাল উদ্ধার করে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। খাল উদ্ধার কার্যক্রম শেষে গণমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, প্রতিটি খালের সীমানায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। সে ঘোষণার পর তিন বছর পেরিয়ে চলছে চার বছর। কিন্তু এখনো সেই খালকে অবৈধ দখলমুক্ত করা যায়নি। যদিও গত ২৫ ফেব্রুয়ারি লাউতলা খালে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে উত্তর সিটি করপোরেশন। এ অভিযানে ১০ তলা ভবনসহ ছয়টি স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয় সংস্থাটি। একই সঙ্গে পরিষ্কারও করা হয়।

এ ছাড়া রামচন্দ্রপুর খালটি ২০২২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি একটি ভাসমান খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) ভাড়া নিয়ে টানা ৪০ দিন খালের খননকাজ করা হয়। সংস্কার শেষে ওই বছরের ৩১ মার্চ খালে নৌকাভ্রমণের আয়োজন করেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। সেদিন তিনি কিছু প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতির কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। শুধু গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মেয়র একবার রামচন্দ্রপুর খাল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন। আবর্জনা ফেলার দায়ে খালপাড়ের একটি গরুর খামারকে সেদিন ৩ লাখ টাকা জরিমানা করতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এ নির্দেশনা তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। কিন্তু পরে আর তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। সবশেষ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রামচন্দ্রপুর খালে পরিষ্কার অভিযান পরিচালনা করে ডিএনসিসি। অভিযানে খালে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ১০ তলার একটি ভবন নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। খালটি পরিষ্কার করা হলেও এখনো পুরোপুরি দখলমুক্ত হয়নি।

শুধু লাউতলা ও রামচন্দ্রপুর খাল নয়, একই অবস্থা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও উত্তর সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর হওয়ার ২৬টি খালের। সংস্থা দুটি খাল পরিষ্কার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করলেও কিছুদিন পর আবার তা দখল হয়ে যায়। এ খালগুলো ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসা থেকে বুঝে নেয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। হস্তান্তরের পর দুই সিটি এ মহানগরকে জলাবদ্ধতা মুক্ত রাখতে খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নানা তোড়জোড়-দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। গত চার বছরে মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ হয় আবার তা দখলও হয়ে যায়। অথচ এ দীর্ঘ সময়েও দখলদারের তালিকা ও সীমানা নির্ধারণ করতে পারেনি তারা। শুধু খাল পরিষ্কার অভিযানে সীমাবদ্ধ ছিল সংস্থা দুটি।

জানা যায়, ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসা থেকে ২৬টি খাল বুঝে নেয় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় খাল রয়েছে কাঁটাসুর, হাজারীবাগ, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর, আবদুল্লাপুর, রামচন্দ্রপুর, সুতিভোলা, বাউনিয়া, দ্বিগুণ, দিয়াবাড়ী, রায়েরবাজার, বাইশটেকি ও শাহজাহানপুর খাল। আর দক্ষিণ এলাকায় খাল রয়েছে, জিরানী, মান্ডা, মেরাদিয়া, গজারিয়া, কসাইবাড়ী, শাহজাদপুর, ডুমনি, শ্যামপুর, বোয়ালিয়া, রামপুরা, ধোলাইখাল, গোবিন্দপুর, সেগুনবাগিচা ও খিলগাঁও-বাসাবো খাল। এসব খালের মধ্যে একটিও উদ্ধার করতে পারেনি দুই সিটি করপোরেশন। যদিও মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে সংস্থা দুটি। সিটি করপোরেশনের হিসাবে, রাজধানীতে খাল রয়েছে ৬৯টি। এর মধ্যে ২০২০ সালের শেষের দিকে ঢাকা ওয়াসা সিটি করপোরেশনের কাছে ২৬টি হস্তান্তর করেছে। ইতোমধ্যে খাল হস্তান্তরের চার বছর হতে চলল। এখন পর্যন্ত একটি খালও উদ্ধার করতে পারেনি সিটি করপোরেশন।

বিভিন্ন সময় লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছেন মেয়ররা। তবে খালগুলো উদ্ধার করতে হলে আগে জরিপ ও সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। এরপর উদ্ধার করে হাঁটার পথসহ সৌন্দর্যবর্ধন করতে হবে। তাহলে খালের উদ্ধার টেকসই হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ঢাকার খালগুলো শুধু হাতবদল হয়েছে। প্রকৃত অর্থে কোনো কাজই হয়নি। মালিকানা পাওয়ার পর প্রথম কাজ ছিল সীমানা নির্ধারণ করা। ডিএসসিসি কিংবা ডিএনসিসি পরিপূর্ণভাবে একটি খালের সীমানা নির্ধারণ করতে পারেনি।

দুই সিটি করপোরেশন এখনো এমন একটি আদর্শ খাল তৈরি করতে পারেনি, যেখানে দখল-দূষণের কোনো অস্তিত্ব নেই। বিপরীতে খাল পরিষ্কার ও বিশেষ অভিযানের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এটা টেকসই সমাধান না। তিনি বলেন, খাল উদ্ধার করে খালের দুই পাড়ে গাছ লাগানো ও মানুষের হাঁটারপথ করতে হবে। একই সঙ্গে জায়গা থাকলে সড়ক করতে পারে। খালকেন্দ্রিক মানুষের যত সম্পৃক্ততা বাড়ানো যায় ততই খাল সংস্কারে টেকসই উন্নয়ন হবে। জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. খায়রুল বাকের বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪টি খালের সংস্কারের জন্য প্রকল্প নিয়েছে। এরই মধ্যে খালের সীমানা নির্ধারণের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খনন কাজ শুরু হবে।

এরপর খালের সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে। এর মধ্যে খাল পাড়ে ওয়াকওয়ে ও সাইকেল লেন তৈরি করা হবে। কোথাও কোথাও সড়কও নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে খালের দুই পাড়ে গাছ রোপণ করা হবে। জায়গা থাকলে পার্ক ও মাঠ তৈরি করা হবে। খালে থাকা সব স্যুয়ারেজ লাইন বন্ধ করা হবে। তিনি আরও বলেন, এ চারটি খালের কাজ কিছু অংশ শেষ হলে বাকি খালগুলোর সংস্কারের প্রকল্প তৈরি করা হবে। ধীরে ধীরে ডিএসসিসির সব খালই সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com